সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রিও ডি জেনিরোতে জি-২০ সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কোনো দেশই পারস্পরিক দায়িত্ব পালনে তার ভূমিকা পালন করা থেকে বিরত থাকতে পারে না।
আরও পড়ুন: শাহজালালে যাত্রীদের ওয়েটিং লাউঞ্জের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
তিনি ক্ষয়িষ্ণু কাঠামোর প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধার এবং টেকসই সমাধানের দিকে বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করতে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং নেট কার্বন নিঃসরণ মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদেরর প্রতি 'তিন শূন্যের বিশ্ব' গড়ে তোলার পক্ষে জোরালো আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ ভার্চুয়াল বার্তার পর ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি জানজা লুলার উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জি-২০ সামাজিক সম্মেলনের অধিবেশন শুরু হয়।
ব্রাজিলের পাশাপাশি গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাবাউট পোভার্টি অ্যান্ড হাঙ্গারে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে যোগ দেওয়ায় এই অধিবেশন একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অধ্যাপক ইউনূসের দূরদর্শী ভাষণ 'একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং একটি টেকসই পৃথিবী নির্মাণ' শীর্ষক এই উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্টে একটি অনুপ্রেরণামূলক সুর তুলেছে। তিনি একটি ন্যায্য, আরও স্থিতিশীল বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে জি-২০ বৈশ্বিক জোট প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস এই যুগান্তকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
ব্রাজিলের জি-২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে গঠিত এই জোটের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে একত্রিত করা।
নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে এ বছরের জি-২০ আলোচনার তিনটি মূল বিষয়ে অবদান রাখতে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এই রূপান্তরমূলক পদ্ধতির পক্ষে ওকালতি করে, তিনি খরচ কমানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি নতুন মানসিকতা এবং জীবনধারা গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। যা ‘তিন শূন্যের বিশ্ব’র দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে রূপান্তরমুখী সমাধানে সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট লুলাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ অ্যালায়েন্সের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে সমন্বিত মাতৃত্ব ও প্রাক-শৈশবকালীন স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন ।
ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর জসিম উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অদ্যাবধি গ্লোবাল অ্যালায়েন্স জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ৩০টি উন্নীত হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ ৩০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী জি-২০ সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন।